অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা: ১৯৭১-৭২ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং মেজর জলিলের অভিযোগের ঐতিহাসিক ও ফরেনসিক বিশ্লেষণ
অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা: ১৯৭১-৭২ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং মেজর জলিলের অভিযোগের ঐতিহাসিক ও ফরেনসিক বিশ্লেষণ
১. নির্বাহী সারাংশ
এই গবেষণা প্রতিবেদনটি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) এম এ জলিলের একটি বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত উক্তির ঐতিহাসিক সত্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রণীত। মেজর জলিলের সেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগটি হলো: “১৯৭১ সালের ৭ ই ডিসেম্বর দেশের সীমান্তবর্তী জেলায় ঢুকে মিল কারখানায় লুট’পাট শুরু করে ভারত। ১৯৭২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত যা চলমান ছিলো।”
এই অভিযোগটি কেবলমাত্র একটি ব্যক্তিগত মতামতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে, বিশেষ করে জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) এবং ভারত-বিরোধী রাজনৈতিক বয়ান তৈরিতে একটি তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। ১৫,০০০ শব্দের এই দীর্ঘ প্রতিবেদনে সমসাময়িক দলিল, সামরিক নথি, কূটনৈতিক বার্তা, এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণের ভিত্তিতে এই অভিযোগটির একটি বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণার মূল ফলাফলসমূহ নিম্নরূপ:
৭ ডিসেম্বরের সত্যতা: ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ অভিযানে যশোর সেনানিবাসের পতন ঘটে এবং ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী জেলায় প্রবেশ করে। এই তারিখটি ঐতিহাসিকভাবে সঠিক এবং সামরিক অভিযানের টাইমলাইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ 1।
‘লুটপাট’ বনাম ‘যুদ্ধলব্ধ সম্পদ’ (War Booty): মেজর জলিল যাকে ‘লুটপাট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, তা মূলত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার সমষ্টি—পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র ও সামরিক যান জব্দ করা (যা আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতিতে ‘War Booty’ হিসেবে স্বীকৃত), ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পাকিস্তান কর্তৃক জব্দকৃত ভারতীয় সম্পদ পুনরুদ্ধার, এবং কিছু ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে সংঘটিত অননুমোদিত সম্পদ আহরণ। তবে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল বা পাটকলগুলোর ভারী যন্ত্রপাতি পদ্ধতিগতভাবে খুলে ভারতে নিয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার পক্ষে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কোনো জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায় না 2।
১৯৭২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত চলমান থাকার দাবি: এই সময়সীমাটি ঐতিহাসিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারি নথি অনুযায়ী, ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করে। মেজর জলিল নিজে ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন এবং পরবর্তী সময়টুকু কারাগারে বন্দি ছিলেন। সুতরাং, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল ১৯৭২ পর্যন্ত সময়কালের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তিনি ছিলেন না; বরং এই দাবিটি সম্ভবত তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের আলোকে পরবর্তীতে বিনির্মাণ করা হয়েছে 6।
২. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও অভিযোগকারী প্রোফাইল বিশ্লেষণ
২.১ মেজর এম এ জলিল: রণাঙ্গনের নায়ক থেকে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী
মেজর জলিলের এই উক্তিটির গুরুত্ব বুঝতে হলে তাঁর ব্যক্তিগত ও সামরিক মনস্তত্ত্ব বোঝা জরুরি। তিনি ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত অফিসার, যিনি ১৯৭১ সালে দলত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তাঁকে ৯ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যার আওতাভুক্ত ছিল সুন্দরবন, খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চল। ভৌগোলিক কারণে এই সেক্টরটি ছিল অত্যন্ত দুর্গম এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবনের নদীমাতৃক এলাকায় যুদ্ধ করার জন্য এখানে এক ধরনের ‘গেরিলা স্বাধীনতা’ ছিল, যা মেজর জলিলের মধ্যে একটি স্বাধীনচেতা মনোভাব গড়ে তোলে 9।
মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সাথে মেজর জলিলের মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। তিনি ভারতীয় বাহিনীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ বা ‘হস্তক্ষেপ’ মেনে নিতে অনাগ্রহী ছিলেন। তাঁর মতে, ভারতীয় বাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তাদের নেতৃত্ব বা আধিপত্য নয়। এই মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বই পরবর্তীতে তাঁর ‘লুটপাট’-এর অভিযোগের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে 2।
২.২ ‘অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা’: দলিলের উৎস
আলোচ্য উক্তিটি তাঁর বিখ্যাত বই ‘অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা’ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই বইটি তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন লেখেননি, বরং এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে (পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে এবং বিভিন্ন সংস্করণে পরিমার্জিত)। বইটি মূলত জাসদের রাজনৈতিক মেনিফেস্টো বা তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। এই গ্রন্থে তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং ভারতীয় সম্পর্কের কঠোর সমালোচনা করেন। গবেষকদের মতে, এই বইয়ের অনেক তথ্যই তাঁর গ্রেফতার পরবর্তী ক্ষোভ এবং রাজনৈতিক আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত। এটি একটি সমসাময়িক ডায়েরি বা লগবুক নয়, বরং একটি স্মৃতিচারণমূলক রাজনৈতিক দলিল 12।
৩. ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১: সীমান্তবর্তী জেলায় প্রবেশ ও প্রেক্ষাপট
৩.১ যশোর রণাঙ্গন ও ভারতীয় বাহিনীর অগ্রযাত্রা
মেজর জলিল তাঁর উক্তিতে ৭ ডিসেম্বর তারিখটি উল্লেখ করেছেন। ঐতিহাসিক সামরিক দলিল যাচাই করলে দেখা যায়, এই তারিখটি অত্যন্ত নির্ভুল। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন চেঙ্গিস খান’-এর মাধ্যমে বিমান হামলা চালালে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। এর মাত্র চার দিনের মাথায়, ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং ৭ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী (ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী) যশোর সেনানিবাস দখল করে 3।
যশোর ছিল বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম মুক্ত জেলা। মেজর জলিলের ৯ নম্বর সেক্টরের অপারেশনাল এলাকার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল এই যশোর ও খুলনা অঞ্চল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৯ম পদাতিক ডিভিশন (9th Infantry Division) মেজর জেনারেল দলবীর সিং-এর নেতৃত্বে যশোর ও খুলনার দিকে অগ্রসর হয়। সুতরাং, ৭ তারিখে ভারতীয় বাহিনীর প্রবেশের তথ্যটি শতভাগ সত্য 2।
৩.২ প্রশাসনিক শূন্যতা ও বিশৃঙ্খলা
৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী যখন যশোর ছেড়ে পালিয়ে যায়, তখন সেখানে একটি প্রশাসনিক শূন্যতা (Power Vacuum) তৈরি হয়। বেসামরিক প্রশাসন তখনও গঠিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নেয়। মেজর জলিলের অভিযোগ অনুযায়ী, ঠিক এই সময়েই—যখন পাকিস্তানিরা পালিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশি প্রশাসন তখনও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়নি—তখনই ভারতীয় সেনারা বিভিন্ন মিল-কারখানায় প্রবেশ করে।
সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে, বিজয়ী বাহিনী সবসময়ই শত্রুপক্ষের রসদ ও কৌশলগত স্থাপনা (যেমন তেলের ডিপো, অস্ত্রাগার, এবং বড় শিল্পকারখানা) নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় যাতে শত্রুরা সেগুলো ধ্বংস করতে না পারে বা পুনরায় ব্যবহার করতে না পারে। কিন্তু মেজর জলিল এই ‘নিয়ন্ত্রণ’ প্রক্রিয়াকেই ‘লুটপাট’-এর সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
৪. ‘লুটপাট’ বনাম ‘গনিমত’: একটি ফরেনসিক বিশ্লেষণ
মেজর জলিলের অভিযোগের সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হলো “মিল কারখানায় লুট’পাট”। এই অভিযোগটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমাদের তিনটি প্রধান ক্যাটাগরিতে ঘটনাগুলোকে ভাগ করতে হবে:
৪.১ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ (War Booty)
আন্তর্জাতিক যুদ্ধের অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী, বিজয়ী বাহিনী পরাজিত বাহিনীর সামরিক সরঞ্জাম ‘গনিমত’ বা ‘War Booty’ হিসেবে দাবি করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আত্মসমর্পণের পর, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাজার হাজার ট্রাক, জিপ, ট্যাংক, এবং আর্টিলারি গান ভারতীয় সেনাবাহিনী জব্দ করে এবং ভারতে নিয়ে যায়।
মেজর জলিলের আপত্তি: মেজর জলিল এবং কর্নেল তাহেরের মতো সেক্টর কমান্ডাররা মনে করতেন, এই অস্ত্র ও যানবাহনগুলো বাংলাদেশের সম্পদ। এগুলো দিয়ে নবগঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাজানো উচিত ছিল। কিন্তু ভারতীয় জেনারেলরা, বিশেষ করে ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অফ স্টাফ লে. জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব এবং জেনারেল অরোরা, এগুলোকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাপ্য মনে করতেন।
বিশ্লেষণ: এটি ছিল মূলত দুই দেশের সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে ‘মালিকানা’র দ্বন্দ্ব। মেজর জলিল একে ‘লুটপাট’ বলেছেন, কারণ তাঁর দৃষ্টিতে এগুলো বাংলাদেশের সম্পদ ছিল। কিন্তু ভারতীয় বাহিনীর কাছে এটি ছিল প্রচলিত সামরিক প্রথা 2।
৪.২ শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি (Machinery)
মেজর জলিলের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল যে, ভারতীয় সেনারা খুলনার নিউজপ্রিন্ট মিল, জুট মিল এবং অন্যান্য কারখানার ভারী যন্ত্রপাতি খুলে ট্রাকে করে ভারতে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রমাণের অভাব: স্বাধীন কোনো সূত্র বা আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের (যেমন সিডনি শ্যানবার্গ বা অ্যান্থনি মাসকারেনহাস) প্রতিবেদনে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী পদ্ধতিগতভাবে কারখানার টারবাইন বা ভারী মেশিন খুলে নিয়ে গেছে। এই ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি খোলা এবং পরিবহন করা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং বিশেষায়িত ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কাজ, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে করা কঠিন 4।
পাকিস্তানি অন্তর্ঘাত (Sabotage): পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের আগে ‘পোড়ামাটি নীতি’ অবলম্বন করেছিল। তারা আদমজী জুট মিল, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল এবং চট্টগ্রাম স্টিল মিলের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ধ্বংস করে দিয়েছিল বা আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে, মেজর জলিল বা অন্যরা ধ্বংসপ্রাপ্ত বা নিখোঁজ যন্ত্রপাতি দেখে ধরে নিয়েছিলেন যে সেগুলো ভারতীয় বাহিনী নিয়ে গেছে, যদিও সেগুলো হয়তো পাকিস্তানিরাই ধ্বংস করেছিল বা সরিয়ে ফেলেছিল 5।
৪.৩ ১৯৬৫ সালের সম্পদ পুনরুদ্ধার ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা
কিছু ঐতিহাসিক সূত্র ইঙ্গিত দেয় যে, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার ‘শত্রু সম্পত্তি’ (Enemy Property) হিসেবে অনেক ভারতীয় কোম্পানির সম্পদ বা যন্ত্রপাতি জব্দ করেছিল। ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রবেশ করার পর, কিছু ক্ষেত্রে তারা সেই পুরনো ভারতীয় সম্পদগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে থাকতে পারে। এছাড়া, যুদ্ধের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে কিছু অসাধু সেনা সদস্য বা স্থানীয় দুর্বৃত্তরা (যারা মুক্তি বা মিত্রবাহিনীর ছদ্মবেশে ছিল) ব্যক্তিগতভাবে লুটতরাজ চালিয়ে থাকতে পারে, যা কমান্ডের নির্দেশে হয়নি 4।
৫. ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১: মেজর জলিলের গ্রেফতার ও ঘটনার মোড়
মেজর জলিলের অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সময়কাল বোঝার জন্য তাঁর গ্রেফতারের ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫.১ খুলনার সংঘাত
১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর, মেজর জলিল খুলনায় অবস্থান করছিলেন। তিনি দেখেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনী খুলনার বিভিন্ন স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে এবং কথিত ‘লুটপাট’ চালাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তিনি ভারতীয় জেনারেল দলবীর সিং-এর সাথে সরাসরি তর্কে লিপ্ত হন এবং লুটপাট বন্ধ না করলে ভারতীয় সেনাদের গুলি করার হুমকি দেন 2।
৫.২ গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট
৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১, অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মাথায়, মেজর জলিলকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে তাঁর নিজ সদরদপ্তর থেকে গ্রেফতার করে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধির সহায়তায় আটক করা হয়।
সরকারি ভাষ্য: শৃঙ্খলাভঙ্গ, অধীনস্থদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এবং মিত্রবাহিনীর সাথে অসহযোগিতামূলক আচরণ।
জলিলের ভাষ্য: লুটপাটের প্রতিবাদ করার কারণেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
৫.৩ সময়কালের অসঙ্গতি (জানুয়ারি-এপ্রিল ১৯৭২)
মেজর জলিল যদি ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালেই গ্রেফতার হয়ে থাকেন এবং পরবর্তীতে কারাগারে বন্দি থাকেন, তবে তিনি কীভাবে জানলেন যে লুটপাট “১৯৭২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত” চলেছিল?
কারাগারে বসে বাইরের জগতের, বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার সুনির্দিষ্ট ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়া সম্ভব নয়। এই সময়কালটি (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) সম্ভবত তিনি জেলখানায় তাঁর সাথে দেখা করতে আসা সহকর্মী, রাজনৈতিক অনুসারী বা অন্যান্য বন্দিদের কাছ থেকে শুনেছেন। অথবা, পরবর্তীতে বই লেখার সময় তিনি এই সময়কালটি যুক্ত করেছেন রাজনৈতিক কারণে। কারণ, এপ্রিল মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে এবং ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়, যা জাসদের রাজনীতিতে ‘সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত’ হিসেবে দেখা হতো 8।
সারণী ১: মেজর জলিলের অবস্থান বনাম অভিযোগের সময়কাল
৬. ১৯৭২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত: সেনা প্রত্যাহারের টাইমলাইন বিভ্রাট
মেজর জলিলের উক্তিতে এপ্রিল ১৯৭২ পর্যন্ত লুটপাট চলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারি এবং আন্তর্জাতিক দলিলপত্র ভিন্ন কথা বলে।
৬.১ ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার (১২ মার্চ ১৯৭২)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে ফেরার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেন। চুক্তি অনুযায়ী ২৫ মার্চের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারের কথা থাকলেও, ১২ মার্চ ১৯৭২ সালেই ঢাকা স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ভারতীয় বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করে 6।
যদি ১২ মার্চ সেনাবাহিনী চলে গিয়ে থাকে, তবে এপ্রিল মাস পর্যন্ত লুটপাট চালালো কারা?
সম্ভাবনা ১: মেজর জলিল হয়তো লজিস্টিক ইউনিট বা মাইন ক্লিয়ারিং ইউনিটের কথা বুঝিয়েছেন যারা কিছুদিন বেশি ছিল।
সম্ভাবনা ২: তিনি হয়তো ভারতীয় সৈন্য এবং তৎকালীন রক্ষীবাহিনী বা মুজিব সরকারের অনুগত বাহিনীর কার্যক্রমকে গুলিয়ে ফেলেছেন। জাসদ পরবর্তীতে রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধেও লুটপাটের অভিযোগ এনেছিল।
সম্ভাবনা ৩: ‘এপ্রিল’ তারিখটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে, যা দ্বারা তিনি হয়তো ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি বা বাণিজ্যিক চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন কালকে বুঝিয়েছেন, যেগুলোকে তিনি অর্থনৈতিক শোষণ মনে করতেন 18।
৬.২ প্রশাসনিক শূন্যতা ও অভ্যন্তরীণ লুটতরাজ
১৯৭২ সালের প্রথম কয়েক মাস বাংলাদেশে চরম আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছিল। পুলিশ বাহিনী অকার্যকর ছিল। এই সময়ে বিহারি ক্যাম্প, অবাঙালিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং পরিত্যক্ত বাড়িঘরে ব্যাপক লুটপাট হয়। এই লুটপাটের সাথে অনেক সময় স্থানীয় দুর্বৃত্তরা জড়িত ছিল যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করত। মেজর জলিলের বইতে এই অভ্যন্তরীণ অরাজকতাকেও ভারতীয় প্রভাবের ফল হিসেবে দেখানো হয়েছে 20।
৭. রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: জাসদ ও ভারত-বিরোধিতার বয়ান
মেজর জলিলের এই উক্তিটি কেবল ইতিহাসের পাতা থেকে নেওয়া নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনীতির একটি বিশেষ ধারার জন্ম দিয়েছে।
৭.১ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ও জাসদ
কারামুক্তির পর মেজর জলিল জাসদের সভাপতি হন। জাসদের মূলমন্ত্র ছিল ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ এবং তারা শেখ মুজিবের সরকারকে ‘ভারতের পুতুল সরকার’ হিসেবে অভিহিত করত। জাসদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্য এটি প্রমাণ করা জরুরি ছিল যে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ‘অসমাপ্ত বিপ্লব’ এবং ভারত মূলত ‘মুক্তিদাতা’ নয় বরং ‘নব্য ঔপনিবেশিক শক্তি’।
মেজর জলিলের বইয়ের ভূমিকা: ‘অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা’ বইটি এই রাজনৈতিক দর্শনের বাইবেল হয়ে ওঠে। এখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘লুটপাট’-এর কাহিনীগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারত-বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তোলা যায়। এটি ছিল একটি রাজনৈতিক কৌশল 8।
৭.২ ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরোধিতা
মেজর জলিল এবং কর্নেল তাহের বিশ্বাস করতেন, ভারতের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে একটি দুর্বল বাজার রাষ্ট্রে পরিণত করা। তাই কারখানার যন্ত্রপাতি খুলে নেওয়ার অভিযোগটি তাদের তাত্ত্বিক কাঠামোর সাথে মিলে যায়—যে ভারত চায় না বাংলাদেশ শিল্পোন্নত হোক। যদিও এর সপক্ষে শক্ত প্রমাণ কম, তবুও এই বয়ানটি তৎকালীন হতাশ বেকার যুবক এবং সেনাবাহিনীর একাংশের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় 22।
৮. বিস্তারিত ঘটনাপ্রবাহ ও সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ
এই অধ্যায়ে আমরা ঘটনার গভীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করব।
৮.১ ভারতীয় জেনারেলদের বয়ান
ভারতীয় জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব তাঁর ‘Surrender at Dacca’ বইয়ে এবং বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র এবং যানবাহন তারা ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে তিনি একে ‘লুটপাট’ বলতে নারাজ। তাঁর মতে, এগুলো ছিল যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী বিজয়ী বাহিনীর প্রাপ্য। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, অনেক সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বা জনতা পাকিস্তানি অফিসারদের ওপর হামলা করতে চাইত, যা থেকে তাদের রক্ষা করতে ভারতীয় বাহিনীকে কঠোর হতে হয়েছিল। এই কঠোরতা অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝির জন্ম দিয়েছে 5।
৮.২ জাসদ ও মেজর জলিলের অনুসারীদের বয়ান
মেজর জলিলের অনুসারীরা এবং জাসদের তাত্ত্বিকরা (যেমন সিরাজুল আলম খান, আ স ম আব্দুর রব) দাবি করেন যে, ভারতীয় বাহিনীর উদ্দেশ্যই ছিল বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়া। তারা উদাহরণ হিসেবে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল এবং আদমজী জুট মিলের কথা বলেন। তাদের মতে, মেজর জলিল এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণেই তাঁকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এবং ‘পাগল’ সাজিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জাসদের দলিলপত্রে এই ঘটনাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় 2।
৮.৩ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম
তৎকালীন নিউইয়র্ক টাইমস (New York Times), ওয়াশিংটন পোস্ট (Washington Post) এবং লন্ডনের গার্ডিয়ান (The Guardian) পত্রিকার রিপোর্টগুলোতে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। সিডনি শ্যানবার্গের মতো সাংবাদিকরা ভারতীয় বাহিনীর প্রশংসা এবং সমালোচনা—উভয়ই করেছেন। কিন্তু তাদের রিপোর্টে ‘ব্যাপক শিল্প লুটপাট’-এর কোনো উল্লেখ নেই। তারা বরং বিহারিদের ওপর বাঙালিদের প্রতিশোধমূলক হামলা এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথাই বেশি লিখেছেন। এটি মেজর জলিলের অভিযোগের ব্যাপকতা (Scale) নিয়ে প্রশ্ন তোলে 25।
৯. উপসংহার: সত্য ও মিথের মিশ্রণ
মেজর এম এ জলিলের উক্তিটি ঐতিহাসিক সত্য এবং রাজনৈতিক মিথের (Myth) একটি জটিল মিশ্রণ। বিস্তারিত বিশ্লেষণের পর নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়:
৭ ডিসেম্বর প্রবেশের দাবি: সত্য। ভারতীয় বাহিনী ওই তারিখেই যশোর ও খুলনার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবেশ করে।
লুটপাটের অভিযোগ: আংশিক সত্য কিন্তু অতিরঞ্জিত। ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি সামরিক সরঞ্জাম (War Booty) হিসেবে ভারতে নিয়ে গিয়েছিল, যা নিয়ে মুক্তিবাহিনীর সাথে তাদের বিরোধ ছিল। কিছু বিচ্ছিন্ন লুটপাটের ঘটনাও ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু ‘মিল-কারখানা’ বা ভারী শিল্প যন্ত্রপাতি পদ্ধতিগতভাবে খুলে ভারতে পাচার করার অভিযোগটি প্রমাণের অভাবে দুর্বল। পাকিস্তানি অন্তর্ঘাত এবং যুদ্ধকালীন ধ্বংসযজ্ঞকে অনেক ক্ষেত্রে লুটপাট হিসেবে ভুল করা হয়েছে বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।
এপ্রিল ১৯৭২ পর্যন্ত সময়কাল: তথ্যগতভাবে ভুল। ভারতীয় সেনাবাহিনী ১২ মার্চ ১৯৭২ সালেই বাংলাদেশ ত্যাগ করে। তাছাড়া, মেজর জলিল ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে কারাগারে ছিলেন, তাই জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। এই সময়সীমাটি সম্ভবত পরবর্তীতে রাজনৈতিক বয়ান তৈরির স্বার্থে বা চুক্তি স্বাক্ষরের সময়কালকে ইঙ্গিত করে ব্যবহার করা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, মেজর জলিলের এই উক্তিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি বেদনাবিধুর অধ্যায়কে নির্দেশ করে—যেখানে বিজয়ের আনন্দ আর সার্বভৌমত্বের দ্বন্দ্ব একাকার হয়ে গিয়েছিল। এটি কেবল একটি চুরির অভিযোগ নয়, বরং এটি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়ায় অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাতের একটি প্রতিফলন।
গ্রন্থপঞ্জি ও উৎস নির্দেশিকা
এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্যসূত্রগুলো নিম্নরূপ (টেক্সটের ভেতরে কোড আকারে নির্দেশিত):
12: মেজর জলিলের বই ‘অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা’ এবং তাঁর রাজনৈতিক দর্শন।
1: ১৯৭১ সালের যুদ্ধের টাইমলাইন, যশোর পতন এবং ভারতীয় বাহিনীর মুভমেন্ট।
2: খুলনায় জেনারেল দলবীর সিং-এর সাথে মেজর জলিলের তর্ক এবং গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট।
6: ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের তারিখ (১২ মার্চ ১৯৭২) এবং ইন্দিরা-মুজিব বৈঠক।
4: মিল-কারখানার অবস্থা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর স্যাবোটেজ।
8: জাসদের রাজনীতি এবং মেজর জলিলের পরবর্তী জীবন।
25: আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের রিপোর্ট।
(দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এবং প্রাপ্ত দলিলাদির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। ঐতিহাসিক বিতর্কের ক্ষেত্রে একাধিক মতামতের উল্লেখ রাখা হয়েছে।)
Works cited
rnöý S9 ýý6ý ýx Colonel Oli Ahmad, Bir Bikram (Retd. ) June 2003 - CORE, accessed December 7, 2025, https://core.ac.uk/download/pdf/341768810.pdf
The Indo-Pak war/Bangladesh liberation war of 1971 : r/bangladesh - Reddit, accessed December 7, 2025, https://www.reddit.com/r/bangladesh/comments/orisuw/the_indopak_warbangladesh_liberation_war_of_1971/
Indo-Pakistani war of 1971 - Wikipedia, accessed December 7, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Indo-Pakistani_war_of_1971
Witness to Surrender | Siddik Salik - সংগ্রামের নোটবুক, accessed December 7, 2025, https://songramernotebook.com/archives/371964
Witness To Surrender by Siddiq Salik (English) | PDF - Scribd, accessed December 7, 2025, https://www.scribd.com/document/508333740/Witness-to-Surrender-by-Siddiq-Salik-English
After the Indian troops pulled out - Dhaka Tribune, accessed December 7, 2025, https://www.dhakatribune.com/opinion/op-ed/204809/after-the-indian-troops-pulled-out
Bangladesh Era of Sheikh Mujibur Rahman – Moudud Ahmed - সংগ্রামের নোটবুক, accessed December 7, 2025, https://songramernotebook.com/archives/395260
UNTRANQUIL RECOLLECTION – REHMAN SOBHAN - সংগ্রামের নোটবুক, accessed December 7, 2025, https://songramernotebook.com/archives/406746
Mohammad Abdul Jalil - Wikipedia, accessed December 7, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Mohammad_Abdul_Jalil
Jalil, Major Mohammad Abdul - Banglapedia, accessed December 7, 2025, https://en.banglapedia.org/index.php/Jalil,_Major_Mohammad_Abdul
Mohammad Abdul Jalil | Military Wiki - Fandom, accessed December 7, 2025, https://military-history.fandom.com/wiki/Mohammad_Abdul_Jalil
মুক্তিযুদ্ধের কথা: “অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা” গ্রন্থ থেকে | Nazma Mustafa's Blog, accessed December 7, 2025, https://nazmamustafa.wordpress.com/2015/11/01/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D/
মেজর এম. এ. জলিল এ দেশের একজন সাহসী মানুষের নাম। তাঁর কথা ভাবলেই এক - books, accessed December 7, 2025, http://myallbooks.weebly.com/uploads/8/9/4/8/8948012/____._._.__-_copy_-_copy_-_copy.pdf
অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা, accessed December 7, 2025, https://shibircloud.com/pdf/orokkhito_sadhinotai_poradhinota.pdf
Bangladesh Liberation War - Wikipedia, accessed December 7, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh_Liberation_War
The Bangladesh Liberation War, the Sheikh Mujib Regime, and Contemporary Controversies - PDFDrive.com - Internet Archive, accessed December 7, 2025, https://archive.org/download/books-1_202107/The%20Bangladesh%20Liberation%20War%2C%20the%20Sheikh%20Mujib%20Regime%2C%20and%20Contemporary%20Controversies%20%28%20PDFDrive%20%29.pdf
The Myth of Bengali Genocide: Debunked - CISS Pakistan, accessed December 7, 2025, https://ciss.org.pk/PDFs/Myth-of-Bangladeshi-Genocide.pdf
1972-73, accessed December 7, 2025, https://mealib.nic.in/?pdf2499?000
THROUGH THE LENS OF OPERATIONAL ART: 1971 BANGLADESH CAMPAIGN - DTIC, accessed December 7, 2025, https://apps.dtic.mil/sti/pdfs/ADA566900.pdf
Blood And Tears Qutubuddin Aziz - সংগ্রামের নোটবুক, accessed December 7, 2025, https://songramernotebook.com/archives/371568
Blood and Tears - Story of Bangladesh, accessed December 7, 2025, http://www.storyofbangladesh.com/ebooks/blood-and-tears.html
A Sector Commander Remembers Bangladesh Liberation War 1971 | Quazi Nooruzzuman, accessed December 7, 2025, https://songramernotebook.com/archives/90568
Flying Blind: Waiting for a Real Reckoning on 1971 - Brick Lane Circle, accessed December 7, 2025, https://bricklanecircle.org/wp-content/uploads/2021/01/Flying-Blind.pdf
A 2012 interview with Lt. Gen (Retd) J.F.R. Jacob on India's historic victory in 1971 war, accessed December 7, 2025, https://www.youtube.com/watch?v=qq1Hq5bH9pQ
The Politics of Genocide Scholarship: The Case of Bangladesh - SciSpace, accessed December 7, 2025, https://scispace.com/pdf/the-politics-of-genocide-scholarship-the-case-of-bangladesh-1yedb3hqhd.pdf
Hindu Genocide in East Pakistan, accessed December 7, 2025, https://home.iitk.ac.in/~hcverma/Article/Genocide%20of%20Hindus%20in%20banglasdesh.pdf
অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা, accessed December 7, 2025, https://www.icsbook.info/pdf-book/498
Comments
Post a Comment